বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:১৭ অপরাহ্ন
অনলাইন ডেস্ক: ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের হাজারতম দিন পেরিয়ে গেছে। এরইমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সরবরাহ করা দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে প্রথমবারের মতো রাশিয়ার ভূখণ্ডে হামলা চালিয়েছে ইউক্রেন। অন্যদিকে ইউক্রেন যুদ্ধের গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে এসে রণাঙ্গনজুড়ে রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর বড় অগ্রগতির খবর জানাচ্ছে ইনস্টিটিউট ফর দ্য স্টাডি অব ওয়ার বা আইএসডব্লিউ।
এমন পরিস্থিতিতে ২০২৫ সালে ইউক্রেন যুদ্ধ শেষ হবে, নাকি নতুন কোনো দিকে মোড় নেবে সেই প্রশ্ন সামনে আসছে। ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনের সামরিক অভিযান শুরু করে রাশিয়া। এ যুদ্ধকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের সবচেয়ে বড় সংঘাত বলা হচ্ছে।
এ যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ সামরিক সহায়তা পেয়েছে কিয়েভ। যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া অস্ত্র-সরঞ্জামের মধ্যে ছিল দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রও। দিন কয়েক আগেই এসব ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে রাশিয়ার ভূখণ্ডে হামলা চালানোর অনুমতি দেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
এরইমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। নির্বাচনী প্রচারণার শুরু থেকেই ইউক্রেন যুদ্ধ শেষ করার বিষয়ে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছিলেন তিনি। আগামী ২০ জানুয়ারি হোয়াইট হাউসে বসতে যাচ্ছেন তিনি।
যুদ্ধের হাজারতম দিনে ইউক্রেনের পার্লামেন্টে দেওয়া ভাষণে দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেন, চলমান যুদ্ধে কে জয়ী হবে, তা ২০২৫ সালেই নির্ধারণ হয়ে যাবে। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি চলতি মাসের মাঝামাঝি বলেছিলেন, তিনি নিশ্চিত যে ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর রাশিয়ার সঙ্গে তার দেশের যুদ্ধ ‘দ্রুত শেষ’ হবে।
তিনি জানান, ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ের পর ফোনে তাদের মধ্যে যে আলাপ হয়েছে তাতে তারা ‘গঠনমূলক মতবিনিময়’ করেছেন। ট্রাম্প ধারাবাহিকভাবে বলে আসছেন, যুদ্ধ শেষ করা হলো তার অগ্রাধিকার। তার মতে, কিয়েভকে সামরিক সহায়তা দেওয়ার নামে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদের অপচয় হচ্ছে।
চলতি বছর যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেস ৬১ বিলিয়ন ডলারের সামরিক সহায়তা প্যাকেজের অনুমোদন দেয় ইউক্রেনের জন্য। দেশটি ইউক্রেনের সবচেয়ে বড় অস্ত্র সরবরাহকারী দেশ। জার্মান গবেষণা প্রতিষ্ঠান কিয়েল ইনস্টিটিউট ফর দ্য ওয়ার্ল্ড ইকনমির তথ্য অনুযায়ী, যুদ্ধ শুরুর পর থেকে চলতি বছর জুন পর্যন্ত কিয়েভকে সাড়ে ৫৫ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র কিংবা উপকরণ পাঠিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
যদিও দেশটির অভ্যন্তরে ইউক্রেনকে অস্ত্র সহায়তা দেওয়ার সমর্থন কমছে, বিশেষ করে রিপাবলিকান সমর্থকদের মধ্যে। ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হিসেবে যোগ দেওয়ার পর ইউক্রেনের জন্য অস্ত্র সহায়তা কমবে কি না, তা নিয়েও শঙ্কা রয়েছে কিয়েভের। ইউক্রেনের কাছে আছে যুক্তরাষ্ট্রের এটিএসিএমএস (আর্মি ট্যাকটিক্যাল মিসাইল সিস্টেম) ক্ষেপণাস্ত্র, যার পাল্লা প্রায় ৩০০ কিলোমিটার। একইসঙ্গে ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্যের স্টর্ম শ্যাডো ক্ষেপণাস্ত্রও তাদের হাতে রয়েছে।
তবে পশ্চিমা দেশগুলো এতদিন ইউক্রেনকে সেসব দূরপাল্লার অস্ত্র রাশিয়ার ভেতরে ব্যবহার করতে নিষেধ করেছিল। সাধারণত যুক্তরাষ্ট্রের সিদ্ধান্ত অনুসরণ করে থাকে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও সমগ্র পশ্চিমারা। তারাও হয়তো প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সিদ্ধান্তেই হাঁটবে। তার এ সিদ্ধান্ত রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে বুঝিয়ে দিল যে সামরিক উপায়ে তিনি এ যুদ্ধ জিততে পারবেন না।
ইউক্রেন যুক্তরাষ্ট্রের দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে হামলা চালালে পরমাণু অস্ত্র দিয়ে পাল্টা জবাব দেওয়ার হুঁশিয়ারি আগেই দিয়ে রেখেছিল মস্কো। কিয়েভের হামলার পর নতুন করে পরমাণু যুদ্ধের শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র ব্যবহার করে হামলার অনুমতির সিদ্ধান্তের বিষয়ে এখনো কোনো মন্তব্য করেননি। তবে গত সেপ্টেম্বরে তিনি বলেছিলেন, ইউক্রেন যদি এই ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে, তবে তা ন্যাটোভুক্ত দেশগুলোর ‘সরাসরি যুদ্ধে অংশ নেওয়া’র সমতুল্য হবে।
সোমবার পুতিনের মুখপাত্র বলেন, যুক্তরাষ্ট্র এখানে ‘আগুনে ঘি ঢালছে। বাইডেনের অনুমতির পর ইউক্রেন যে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে হামলা চালাতে পারে, সে আশঙ্কা আগেই ছিল রাশিয়ার। এরইমধ্যে পরমাণুনীতিতে পরিবর্তন এনেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
অনেকটা যুক্তরাষ্ট্রের দিকেই ইঙ্গিত করে নতুন নীতিতে বলা হয়েছে, পারমাণবিক শক্তিধর কোনো দেশের সমর্থন নিয়ে রাশিয়ায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হলে পাল্টা জবাবে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে পারবে মস্কো।
শুধু তা–ই নয়, যদি রাশিয়ার বিরুদ্ধে কোনো জোটের সদস্যদেশ আগ্রাসন চালায়, তাহলে পুরো জোটই এ আগ্রাসন চালিয়েছে, এমনটি বিবেচনা করতে পারবে ক্রেমলিন। যুদ্ধ চলতে থাকায় ইউক্রেনে সাধারণ নাগরিকদের জীবন ক্রমশ কঠিন হয়ে উঠছে। তাদের দিক থেকেও যুদ্ধ শেষ করার দাবি উঠছে।
কিয়েভ ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব সোশ্যিওলজির এক গবেষণায় দেখা যায়, ৭৭ শতাংশ উত্তরদাতা তাদের পরিবারের সদস্য, বন্ধু বা পরিচিতজনদের হারানোর অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করেছেন। এ ছাড়া, দুই-তৃতীয়াংশ মানুষ জানান, যুদ্ধে তাদের আয় অপর্যাপ্ত।
ওয়াশিংটনভিত্তিক বিশ্লেষণ ও পরামর্শক সংস্থা গ্যালআপের এক জরিপ বলছে, বেশির ভাগ ইউক্রেনীয় চান রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ শেষ হোক। দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা সংঘাতের পর, জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ৫২ শতাংশেরই অভিমত, তারা যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার পরিবর্তে আলোচনার মাধ্যমে শান্তি প্রতিষ্ঠা চান। যদিও ২০২২ সালে ৭৩ শতাংশ ইউক্রেনীয়ই যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার পক্ষে ছিলেন।